বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সংযুক্তি

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির একটি দেশ। বেশ কিছু আধুনিক প্রকল্পের মাধ্যমে দেশটি বিশ্ব দরবারে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্পগুলো প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে এগিয়ে নিয়ে যাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত করবে।

তেমনই একটি প্রকল্প হলো চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল নির্মাণ। বে টার্মিনালটির আওতায় থাকবে দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল ও একটি বহুমুখী টার্মিনাল।

এই বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের সঙ্গে বহির্বাণিজ্যের অন্যতম প্রবেশপথ হিসেবে গড়ে উঠবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার মান, সক্ষমতা ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া এই নতুন বন্দরের অন্যতম লক্ষ্য হলো দেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান সময় কমিয়ে আনা ও যন্ত্রপাতির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং পণ্য পরিবহণ খরচ কমিয়ে আনা।

ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল প্রকল্পে বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কাজে অংশগ্রহণে PSA বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। PSA ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই পরীক্ষা শুরু করেছে এবং প্রকল্পের দ্রুত অগ্রগতির জন্য আমরা বাংলাদেশ নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় , পাবলিক – প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, এটি একটি স্থায়ী ও টেকসই গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন হাব সৃষ্টি করবে যার মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অর্থনীতির সাথে সাথে নিজেদেরকে এক ধাপ এগিয়ে নিতে পারবে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা

Project Updates - with text
Advanced Gate System
Advanced Gate System প্রযুক্তির ব্যবহার

প্রকল্পে ব্যবহৃত Advanced container terminal Gate সিস্টেমটি Optical Character Recognition (OCR) প্রযুক্তি প্রয়োগ করে , যার মাধ্যমে পূর্বানুমোদিত তথ্যের সাথে মিলিয়ে সম্পূর্ণ রূপে কাগজের ব্যবহার ছাড়াই টার্মিনালে আগত কন্টেইনার ট্রাক ও কন্টেইনার সমুহ শনাক্ত করে টার্মিনালে প্রবেশ করানো হয়।

Taller and Faster Quay Cranes
দ্রুত ও উচ্চ গতির Quay Crane এর ব্যবহার

এই বে টার্মিনালটিতে উচ্চতর উত্তোলন ক্ষমতা সম্পন্ন গেন্ট্রি ক্রেন ব্যবহার করা হবে। যেগুলোর মাধ্যমে বন্দরে ভিড়া বড় আকারের জাহাজগুলোকে সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

Twin- lift ও Intelligent Crane Control System প্রযুক্তি সম্বলিত দানবাকারের এই গেন্ট্রি ক্রেনগুলো জাহাজ ও বন্দরের মধ্যে নিরাপদ কন্টেইনার উঠা-নামা নিশ্চিত করবে।

Low-emission electric RTGs
স্বল্পমাত্রার বায়ু দূষণ প্রযুক্তি সম্বলিত বৈদ্যুতিক RTG এর ব্যবহার

টার্মিনালে নিয়মতান্ত্রিক কন্টেইনার উঠানামার পাশাপাশি ইয়ার্ডেও একই ধরণের কর্মদক্ষতার প্রয়োজন। তারই নিশ্চয়তা প্রদানে , বে টার্মিনালে স্বল্পমাত্রার নির্গমনযুক্ত RTG এর একটি বহর ব্যবহার করা হবে । এই RTG গুলো সর্বক্ষণ টার্মিনাল ও ইয়ার্ডের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সংযোগ নিশ্চিত করার পরও খুবই অল্প মাত্রার গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন করবে, যা বায়ুর গুণমান রক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়াও এতে ব্যবহৃত নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে অপচয় কমানো সম্ভব হবে।

PSA Partners with International Finance Corporation (IFC) Towards Bay Terminal Project in Bangladesh
PSA Partners with International Finance Corporation (IFC) Towards Bay Terminal Project in Bangladesh

বাংলাদেশে বে টার্মিনাল প্রকল্পের উন্নয়নে সহায়তার জন্য সর্বোত্তম সেবা এবং দক্ষতা নিয়ে পাশে থাকায়, আইএফসির সাথে পিএসএ-এর সম্পর্ক আরও দৃঢ় হচ্ছে। গত ৩০ আগস্ট ২০২১ তারিখে, পিএসএ এবং আইএফসির মাঝে একটি যৌথ উন্নয়ন চুক্তি JDA (জেডিএ) স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত অংশীদারিত্বের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে, বৈশ্বিক বন্দর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে পিএসএ -এর সক্ষমতা এবং প্রকল্পের সাফল্যে আইএফসি একটি দক্ষ বৈশ্বিক উন্নয়ন অর্থ প্রতিষ্ঠান (ডিএফআই) হিসাবে অবদান রাখবে। পিএসএ-এর টেকসই পরিকল্পনার প্রতি মনোযোগের পাশাপাশি আইএফসির পরিবেশগত এবং সামাজিক ঝুঁকি মোকাবেলার অভিজ্ঞতা প্রকল্পটিকে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সাথে সামঞ্জস্য রাখতে সাহায্য করবে।

previous arrowprevious arrow
next arrownext arrow

PSA এবং বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব

PSA এর বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচিতি

তুয়াস , সিঙ্গাপুর

Tuas বন্দরটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বয়ংক্রিয় বন্দর হিসেবে ধারণা করা হয়ে থাকে।
ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্বকারী এই বন্দরটি বিশ্বের যত Mega – Vessel, Mega-Alliance এবং Mega- Network রয়েছে , এগুলোর বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণ করার জন্য ডিজাইন করা, এবং বছরে ৬৫ মিলিয়ন টিইউস পরিচালনা করার সক্ষমতা রাখে। প্রকল্পটি বন্দর কাঠামোর বাইরে গিয়ে, পরিপূরক লজিস্টিক্স ক্ষমতা ও শক্তিশালী ডিজিটাল সিস্টেম এর মাধ্যমে গতানুগতিক ডিজাইনকে চ্যালেঞ্জ করে। এই বন্দরটি উচ্চতর Supply Chain কার্যকরণের মাধ্যমে, গ্রাহকদের কাছে সামগ্রিক কার্গো সমাধান পৌছে দেয়ার প্রয়াস দেখায়।

প্রকল্পটি বুদ্ধিমান কার্যক্রম পরিচালনা ব্যবস্থা, ঘাট এবং ইয়ার্ড এ অটোমেশনের প্রয়োগ ,পূর্ণ বৈদ্যুতিক স্বয়ংক্রিয় যানবাহন, smart engineering এবং Power management platform এর ব্যবহারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। কর্মদক্ষতা এবং টেকসই পরিবেশের নতুন মাত্রায় পৌঁছাতে এগুলি উদ্ভাবনী ভূমিকা পালন করবে।

প্রাথমিক বার্থগুলির কাজ ২০২১ সালে শুরু করার কথা রয়েছে। ২০৪০ সাল নাগাদ শেষ হবে সম্পূর্ন প্রকল্পটি।

মুম্বাই , ইন্ডিয়া

ভারতের সবচেয়ে বড় কন্টেইনার টার্মিনাল , ভারত মুম্বাই কনটেইনার টার্মিনাল প্রাইভেট লিমিটেড (PSA মুম্বাই) হলো PSA International এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। মহারাষ্ট্রের জওহরলাল নেহেরু বন্দরে অবস্থিত, এর প্রথম পর্যায়টি ১০০০ মিটার বার্থ, ১২ টি Quay crane এর একটি বহর এবং ২৪ লাখ TEU ধারণক্ষমতা নিয়ে গঠিত। PSA ভূমি ও অবকাঠামো তৈরীসহ এই প্রকল্পটি নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং ফেব্রুয়ারী ২০১৮-এ কার্যক্রম শুরু করে। সময়ের আগইে এই প্রকল্পটি সম্পন্ন করে ফেলে। যার পরিপ্রেক্ষিতে , ২০২১ এর জানুয়ারিতে এটি দুই মিলিয়ন TEU এর মাইলফলক অর্জন করে।

দ্বিতীয় ধাপের সম্প্রসারণ কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এবং আশা করা যায় , ২০২২ সাল নাগাদ তা সম্পূর্ণ হবে। এর মাধ্যমে ২০০ হেক্টর ভৌগোলিক এলাকায় বিস্তৃত এই টার্মিনালটির সর্বমোট বাৎসরিক ধারণক্ষমতা ৪৮ লাখ TEU এ এ গিয়ে পৌঁছাবে।

বে টার্মিনাল প্রজেক্টের ভৌগোলিক অবস্থানের মতই, PSA মুম্বাই সমুদ্রপথে ভারতের প্রধান প্রবেশপথ হিসাবে মুম্বাইয়ের অবস্থানকে আরো মজবুত করবে এবং এটিকে একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসাবে উন্নীত করবে। একই সাথে PSA মুম্বই হলো ভারতের ‘ভিশন ২০২২ কে সমর্থনকারী বন্দর অবকাঠামো উন্নয়নের একটি মাইলফলক ।

দাম্মাম, সৌদি আরব

২০২০ সালের পহেলা অক্টোবর, PSA International এর অন্যতম অধীনস্থ সংস্থা সৌদি গ্লোবাল পোর্টস (SGP), কিং আবদুল আজিজ পোর্ট ইন দাম্মাম (KAPD)-এ তাদের প্রথম এবং দ্বিতীয় কনটেইনার টার্মিনাল উভয়ের পরিচালনার ভার গ্রহণ করে এবং এর মাধ্যমে SGP এই বন্দরের একমাত্র কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালক হয়ে উঠে।

SGP ২০১৫ সালে দ্বিতীয় টার্মিনালটির কাজ শুরু করে এবং তা নিখুঁতভাবে সম্পাদন করে। এরই ধারাবাহিকতায়, ২০২০ সালের এপ্রিলে কিং আবদুল আজিজ পোর্ট ইন দাম্মাম বন্দরের প্রথম এবং দ্বিতীয় কনটেইনার টার্মিনালের জন্য সৌদি বন্দর কর্তৃপক্ষের (মাওয়ানি) সাথে SGP-র Build, Operate এবং Transfer (BOT) চুক্তি সুরক্ষিত হয় যার ঠিক ৬ মাস পরেই এর একত্রীকরণের কাজ সম্পন্ন হয়।

মাওয়ানী ও SGP জনশক্তি ধারণ, সম্পদ হস্তান্তর, বন্দর কমিউনিটির সাথে সম্পর্ক এবং অংশীদার দের সহযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত রয়েছে ।মাওয়ানি থেকে সরঞ্জাম স্থানান্তর ছাড়াও, SGP উভয় টার্মিনালগুলোর পরিচালনার সুবিধার্থে ২০০ টিরও বেশি নতুন সরঞ্জাম ক্রয় এর কাজ সম্পাদনা করেছে। এই একত্রীকরণটি , বন্দরটিকে একটি শীর্ষস্থানীয় মেগা কনটেইনার হাবে রূপান্তরিত করার জন্য প্রস্তুত করেছে । এতে করে এটি আধুনিক এবং শক্তিশালী অবকাঠামো দিয়ে বার্ষিক প্রায় ৭৫ লাখ TEU ধারণ ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

যোগাযোগ করুন